বংশীকুন্ডা কলেজ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ (Full- fledged) কলেজ। এটি টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার অনন্য শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। কলেজটি প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক হয়েছে এবং এটার একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও কলেজেটি অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। হাওর এলাকার মানুষের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কলেজের সভাপতি রাসেল আহমেদ তার নিজ উদ্যোগে বংশীকুন্ডা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অবস্থানগত দিক দিয়ে কলেজটি সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে। অত্যন্ত দু:খের বিষয় এখানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি এবং কলেজের অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই দুর্বল। নেই কোনো একাডেমিক ভবন, কমন রুম, বাথরুম, ওয়াশরুম, লাইব্রেরি কক্ষ, আইসিটি ল্যাব এবং হোস্টেল সুবিধাসহ অনেক কিছু। এখানকার জীবন যাত্রার মান খুবই অনুন্নত। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। বিশাল এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী। বংশীকুন্ডা কলেজটি এদের কাছে স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজটি স্বীকৃতিদান প্রাপ্ত নন এমপিও প্রতিষ্ঠান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এটার উন্নয়ন ঘটেনি যদিও কলেজটির অবস্থান এবং একাডেমিক ফলাফল সন্তোষজনক । এখানে কর্মরত শিক্ষকরা এবং কর্মচারীরা সেচ্ছা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই। কলেজটির আর্থিক তহবিল না থাকায় শিক্ষকদের বিনা বেতনে চলতে হচ্ছে। আমি এখানে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রভাষক ব্যবস্থাপনা পদে সুপারিশকৃত শিক্ষক। সরকারিভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পুলিশ ভেরিফিকেইশন এবং এনএসআই ভেরিভিকেইশন সম্পন্ন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা হতে 470 কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এখানে যোগদান করে কোনো প্রকার বেতন ছাড়া শিক্ষকতার এই মহান পেশায় সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।
জানিনা কবে বেতনভুক্ত হতে পারবো ( I don’t know when I can be paid )।
অধিকন্তু, কলেজটা মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ, তাই এটিকে জাতীয়করন করলে হাওর এলাকায় উচ্চ শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটতো। দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করার জন্য বাইরে যেতে হতো না, এরা ডিগ্রী বা স্নাতক কোর্সে বংশীকুন্ডা কলেজে ভর্তি হতে পারতো। কলেজটি সরকারি হলে অবহেলিত হাওর এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটতো। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ কলেজটির প্রতি একটু সুনজর দিলে হাওর পাড়ের শিক্ষায় অনগ্রসর ব্যক্তিদের মধ্যে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে বংশীকুন্ডা কলেজ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতো। পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন, অবহেলিত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে হাওর পাড়ের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা কলেজকে জাতীয়করন করে এলাকার উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মোচন করলে আপনার নিকট এই টাঙ্গুয়ার হাওরবাসী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
কলেজের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের মন্তব্য :
রাসেল আহমেদ, চেয়ারম্যান দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়ন, মধ্যনগর, সুনামগঞ্জ।
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বংশীকুন্ডা কলেজ :
হাওর এলাকার অবহেলিত জনপদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার আলো জাগ্রত করার লক্ষ্যে আমি নিজ উদ্যোগে বংশীকুন্ডা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র ছাত্র -ছাত্রীরা এখন দূর এলাকায় না গিয়ে নিজ এলাকাতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারছে। কলেজটির আর্থিক তহবিল না থাকায় এটি পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটি স্বীকৃতিভুক্ত নন এমপিও কলেজ এবং সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ। কলেজের একাডেমিক ফলাফল সন্তোষজনক। এটি জাতীয়করনের আওতায় পড়ে উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে। এটি সরকারিকরণ হলে কলেজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসবে আর এখানে ডিগ্রী বা স্নাতক কোর্স চালু হবার মাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার বিরাট পরিবর্তন ঘটবে।
দেলোয়ার হোসেন, সিনিয়র প্রভাষক সমাজ বিজ্ঞান :
প্রতিষ্ঠার এক দশক হলেও কলেজের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কলেজটি শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোর উন্নয়নসহ নানান সংকটে ভুগছে। আমি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এখানে আছি এবং কোন প্রকার বেতন ছাড়া সেচ্ছাসেবা প্রদান করে যাচ্ছি। এভাবে আর কতদিন চলা যায়? সবকিছু ঠিক থাকলেও কলেজটি চরম অবহেলিত। আমরা কলেজের উন্নয়ন দেখতে চাই।
পলাশ আহাম্মদ, প্রভাষক ব্যবস্থাপনা :
আমি এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষক। সরকারি মাধ্যমে নিয়োগকৃত আর পুলিশ এবং এনএস আই ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়ে চুয়াডাঙ্গা হতে ৪৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এখানে কর্মরত আছি বিনা বেতনে। আমার চলতে কষ্ট হচ্ছে। শুধু শিক্ষকতা মহান পেশা বলে কষ্ট সহ্য করেও সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। আমি চাই কলেজটি জাতীয়করন করা হোক।
আল মামুন, শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণী :
আমাদের কলেজ চরম অবহেলিত। একাডেমিক ভবনের অভাবে আমাদের ক্লাশ করতে ও পরীক্ষা দিতে সমস্যা হয়। আমাদের কলেজের বিগত একাডেমিক ফলাফল খুব ভালো। কলেজের উন্নয়ন হওয়া দরকার তা না হলে কলেজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
আফসার হাসান মুন্না, শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণী :
বংশীকুন্ডা কলেজ আমাদের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ। আজ এই কলেজ খুবই অবহেলিত। আমরা এখানে খুব সংকটে আছি। কলেজটি জাতীয়করন হলে খুব ভালো হতো।
বাপ্পী তালুকদার, ছাত্রী একাদশ শ্রেণী :
আমরা ছাত্রীরা এখানে সমস্যায় আছি। আমাদের কোনো কমন রুম নেই, বাথরুম ও ওয়াশ রুম নেই এমনকি শ্রেণীকক্ষে ক্লাশ এবং পরীক্ষা দিতে কষ্ট হয়।
অর্ণা রানী সরকার , ছাত্রী একাদশ শ্রেনী :
আমাদের ভাটি এলাকার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজের উন্নয়ন দেখতে চাই। এটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আলম নূর, শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণী :
কলেজের কোনো উন্নয়ন না ঘটার কারনে কলেজটি আজ নানান সংকটে জর্জরিত। শিক্ষক সংকটের কারনে শিক্ষার মান ব্যহত হচ্ছে। এখানে কোন পাকা একাডেমিক ভবন নেই। কলেজের উন্নয়ন হওয়া আবশ্যক। কলেজ সরকারি হলে আমারা এখানে থেকে উচ্চ শিক্ষার সুবিধা গ্রহন করতে পারবো।
শাহাদত হোসেন, শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণী :
আমাদের কলেজের ফলাফল ভালো কিন্তু অবকাঠামোগত অবস্থা একেবারেই খারাপ। আমি চাই আমাদের বংশীকুন্ডা কলেজ সরকারি হোক।
আব্দুল সামাদ আজাদ মেম্বার, অভিভাবক :
বংশীকুন্ডা কলেজের কারনে আমরা এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হয়েছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা নিজ এলাকাতে লেখাপড়া করতে পারছে। কলেজের উন্নয়ন ঘটলে আর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসাবে এটিকে জাতীয়করন করলে ভালো হতো।
মো. নুরুল হক, অভিভাবক :
বংশীকুন্ডা কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের এলাকার শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দু:খের বিষয় কলেজটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। এটির উন্নয়ন করা আবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে।
এবিএম জুয়েল তালুকদার, দাতা সদস্য :
প্রায় দশ বছর হয়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কলেজের কোনো আর্থিক তহবিল নেই। উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ এটি এবং এর একাডেমিক ফলাফল যথেষ্ট সন্তোষজনক। অবস্থানটাও সুবিধাজনক জায়গায়। এটি জাতীয়করন করলে অবহেলিত হাওর এলাকাতে উচ্চ শিক্ষার নতুন দ্বার উন্মোচন হতো।
অমিত হাসান রাজু, উদ্যোক্তা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার :
বংশীকুন্ডা কলেজ অবহেলিত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। কলেজটি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় প্রতিষ্ঠার এক দশক হলেও এখানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। কলেজটির ফলাফল এবং অন্যান্য দিক সন্তোষজনক। উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে এটি জাতীয়করনের জন্য দাবি করতে পারে। কলেজের উন্নয়নের জন্য কর্তৃপক্ষের সুনজর আশা করছি।
জীবন কৃষ্ণ সরকার, হাওর কবি ও লেখক :
বংশীকুন্ডা কলেজ টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। কলেজটি চরম অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।এটার অবকাঠামো উন্নয়নসহ যাবতীয় উন্নয়ন হওয়া দরকার। অবশ্যই, টঙ্গুয়া পাড়ের অবহেলিত জনমানুষের আশার বাতিঘর কলেজটির দ্রুত সরকারিকরনের পদক্ষেপ চাই।
ওহাবলীম, প্রাক্তন শিক্ষার্থী বংশীকুন্ডা কলেজ, শিক্ষার্থী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় :
এটা অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় যে আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজে এখনো কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এলাকার শিক্ষা বিস্তারে কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। সবদিকে বিবেচনা করে কলেজটি জাতীয়করন করলে এলাকায় শিক্ষা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
রাবিকুল ইসলাম রাব্বী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী বংশীকুন্ডা কলেজ, ছাত্রলীগ সদস্য মধ্যনগর উপজেলা ছাত্রলীগ :
বংশীকুন্ডা কলেজ অবহেলিত ভাটি এলাকার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে কলেজের একাডেমিক ফলাফল খুব ভালো। কলেজের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত।
শ্যামল চন্দ্র ভৌমিক, সুশীল সমাজ, বংশীকুন্ডা :
বংশীকুন্ডা কলেজ হাওর এলাকার শিক্ষার বাতিঘর এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য আমাদের কাছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা হাওর পাড়ের মানুষেরা চাই এটা জাতীয়করন করা হোক।
আনোয়ার হোসেন, নৈশ প্রহরী, বংশীকুন্ডা কলেজ :
বংশীকুন্ডা কলেজ আমার কাছে নিজের বাড়ির চাইতেও প্রিয়। অবহেলিত হাওর এলাকায় উচ্চ শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য কলেজের সার্বিক উন্নয়ন করা চাই।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।